আমচাষীদের অনেক সময় নানা ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়। এর মধ্যে আমের গুটিঝরা অন্যতম। গাছে গুটি আসার পর নানা কারণে ঝরে যায়। এসব কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রাকৃতিক কারণ : 
সাধারণত আমগাছে প্রতি মুকুলে ১০০০ থেকে ৬০০০টি পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী 
ফুল থাকে। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে এক থেকে ৩০টি আমের 
গুটি ধরতে দেখা যায়। গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র 
এক থেকে দু’টি গুটি থাকে। বাকি গুটি প্রাকৃতিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ঝরে 
যায়। তবে কোনো কোনো মুকুলে কদাচিৎ চার থেকে পাঁচটি আম ধরতে দেখা যায়। এ 
ক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়।
প্রতিকার : 
অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগতমান ও ফলন 
কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলে সে বছর 
আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার
 ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার দশ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে
 করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সব ফুল ফোটা 
অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে 
করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
মাটিতে রসের অভাব হলে : 
মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক 
পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব 
দেখা দেয়। মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় তাড়াতাড়ি নির্মোচন স্তর গঠিত
 হয়। ফলে আমের গুটি ঝরে যায়।
প্রতিকার : 
মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে 
হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে 
হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ 
দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। 
যেমন- আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার 
অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে 
মিশিয়ে হালকা সূর্যের আলোতে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।
পোকার আক্রমণ হলে : 
গুটি আসার পর প্রাথমিক পর্যায়ে আমের গুটিতে হপার পোকার আক্রমণ হতে পারে।
 এ পোকার পূর্ণবয়স্ক মথ ও কিড়া গুটির রস শোষণ করে খায়, ফলে আমের গুটি 
শুকিয়ে ঝরে যায়।
প্রতিকার : 
রোগ-পোকা থেকে আমের গুটি রক্ষার জন্য গুটি মটরদানার মতো হলেই কীটনাশক ও 
ছত্রাকনাশক একসাথে পানিতে মিশিয়ে গুটিতে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশকের মধ্যে 
সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০
 ইসি গ্রুপের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে 
এবং ছত্রাকনাশকের মধ্যে মেনকোজেব ৮০ ডচ গ্রুপের যেকোনো একটি প্রতি লিটার 
পানিতে দুই গ্রাম হারে একসাথে মিশিয়ে গুটিতে স্প্রে করতে হবে।
আমের গুটি মার্বেল আকৃতির হলে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হতে পরে। এ 
ক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক পোকা আমের নিচের অংশে খোসার ওপরে ডিম পাড়ে। কয়েক দিনের
 মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় এবং লার্ভা খুব ছোট বিন্দুর মতো ছিদ্র করে 
আমের ভেতর ঢুকে পড়ে। প্রথমে শাঁস ও পরে আঁটি খাওয়া শুরু করে। পরে আক্রান্ত 
স্থান কালো হয়ে যায় এবং কোনো কোনো সময় আম ঝরে পড়ে।
পরিচর্যা : আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে।
                                                 
                                            
উত্তর সমূহ